বিকাশ চন্দ || পাঁচটি কবিতা
বিকাশ  চন্দ || পাঁচটি কবিতা
অর্ঘ্য


সুরের আগুনে পোড়ে অর্ধ দগ্ধ চিতা

অন্ধকারের কোটরে সবুজ খোঁজাই সার,

মহাশূন্যের ছাদে কতনা মোহন নক্ষত্র তারা

শ্মশানে সাজানো ফুলের বাগানের পরাগ,

মৌমাছি প্রজাপতি ঘুম জাগানিয়া পাখি গান

চোখের কুয়াশার ভোরে খসে পড়ে নম্র মিনতি,

একাকী মরণ প্রহর জানে আকাশের হাহাকার

মাটিতে ঝরছে পাষাণ ভাঙা স্রোতের বিলাপ,

চুম্বনে কপালের সুখ জানে জননী সকাল

কথা সুর ভাসে অকালে অমৃত ধারায়

#

সমস্ত কথারা জুড়ে থাকে জীবন ক্ষণিকায়

কঠিনে কোমলে অনাহূত  বুকের পিপাসা,

গোটা জীবনের পরিচ্ছেদ অপাপবিদ্ধ মায়া

অকথিত অশোক বিম্বিসার ভাঙা প্তত্নঘর,

পরিশ্রান্ত সময়ে মৃত্যু সন্তাপ গভীর গ্রন্থিতে

ভয় মেশানো রক্ত মজ্জা লীন অন্ধকারে,

নীলকণ্ঠ বিষে পৃথিবীর নীলে শূন্য আর্তনাদ

কেবল মা জানে প্রসারিত হাতের আড়ালে

অকালে হারায় কথা সুর আয়ুর অর্ঘ্য নিবেদনে

 

স্বপ্নচারী

আশ্চর্য আড়ালে ধরা দেবে বন্ধুর পথে সমুজ্জ্বল হাসি

হারাবার কথা ছিল না নেই তেমন,

তবুও আশ্চর্য দহনে পোড়ে অনুভুতি মালা

নদী জানে স্রোত ফুল জানে ভাষা অনুশোচনার

সকল ধর্ম ধ্বজাহীন পরতে পরতে জান্তব প্রহসন,

জনারণ্যেও জাগে মানুষ বুকের উষ্ণতায়

#

জলের ভেতর  বদলে গেছে সকল অবকাশ

রাজরোষে সকল অবশিষ্ট হারায় শস্যের মানুষ,

নিজের ঠিকানায় জন্ম দেশ ভাঙে রাহাজানি

আশ্চর্য খবরদারী পুষে রাখে কাপালিক ক্রোধ,

আলপথে বিষধরী ছুঁয়ে দেখেনি পুরুষ্টু শীষ

অসহায় বাবা নীলকণ্ঠ তাকিয়ে আধবোজা চোখে

#

স্বরবর্ণ অক্ষর বর্ণ মালায় বেমালুম তেজারতি

অন্ন হারা অপু দুর্গা দেখে নন্দন বনে বেপথু প্রদর্শনী,

আশ্চর্য ব্যাঞ্জনায় মুক্তা হাসি অবাক অপেক্ষায় গ্রন্থ ব্রত

অকাল রাত্রি জুড়ে আলোর বেণু ভাষা পঙক্তি হীন,

আনাড়ি সময় একাকার মাতৃপক্ষ পিতৃপক্ষ নীরব আগমন

শরীরে জড়িয়ে আত্মার প্রতীক সে চিন্ময়ী স্বপ্নচারী !

 

শ্লোক

উজ্জ্বল শব্দেরা কখন ভেজে রক্ত তরঙ্গে

অনির্বাণ সময়ে বুকে বেঁধে অক্ষর শলাকা

কলম সুদ্ধ হাতে চেপে বসে বেদনার হাত কড়া

জানিনা এখনও কথার ভেতর নীরবতা ছায়া ময়

#

দিনের সূর্য খেলা শেষ ছায়া হৃদয়ে ভেজে

উন্মত্ত রাতের সময় নির্বিবাদী চাঁদ নামে জলে

পরিতাপ হীন যুঁই বেলা সন্ধ্যা মালতি সুঘ্রাণে ভাসে

আত্মার আশ্রয়ে সকল মানুষের ঘর আনন্দ নিকেতন

শাঁখের শব্দে সন্ধ্যায় আনন্দ ভাসে আজান সুরে

কোথাও না কোথাও রক্ত ফুলের অবয়ব জ্যান্ত পুতুল

অজাত কালের রহস্য জুড়ে জাগে মহাপ্রাণ

তবুও নিরূপম উজ্জ্বলতা ঘিরে অপার রহস্য

#

মায়ের পায়ের জলছাপে জাগে মনোময় সংসার

নির্মল আঁচলে বাঁধো স্নেহময়ী বোধের আলো

অহেতুক বর্ণ বাধার ঘেরাটোপে খসে পড়ে ভিন্ন আয়ুকাল

প্রতি সংসারে চাঁদ হাসি অবাক শিশুর প্রতীক্ষা

আলো আঁধারিয়া বিষ্ময় খেলায় আশ্চর্য তরঙ্গ

অমল উচ্চারণে প্রথম ধ্বনি জানে মা সকল পূন্য শ্লোক

 

প্রত্নস্থ পতি

করতল জানে বিনীত জলের ঘূর্ণি আত্মার আকুতি

অনির্দিষ্ট মিলন পর্ব ভেসে যায় উদ্বাহু সন্ন্যাস কাল,

বর্ণচোরা স্রোতে নীল ঢেউ ছিঁড়ে ফেলে সমুদ্র পদ্ম বুক

কেয়া ঝোপ বালিয়াড়ি উধাও শরীর সাগর মেঘ,

হা হা বাতাসে বুক ভাঙে শঙ্খ চিল সমুদ্র হাঁস

ঘ্রাণ হীন সময়ের ইচ্ছে স্রোতে ভাসে বেপথু বিলাস

#

স্থল রাত্রি ছিঁড়ে খায় শরীর জানে জলের অভিশাপ

সাক্ষী রক্ত মাখা লাল কাঁকড়া বুক খায় উপকূল সভ্যতা,

সৈকতে ফাগুন আগুন চিরকাল মগ্ন অনন্ত উচ্ছ্বাসে

আশ্চর্য বৈভবে বিষণ্ণ বিলাস গিলে খায় বসন্ত সময়,

দুলে দুলে পাল শূন্য নৌকা কোথায় পারাপার

সতীঘাটে মহানন্দে কে শোনায় জীবনের আলাপ

#

প্রচলিত রীতি বোঝেনি শুকনো বিধবা দূর্বা

শরীর জুড়ে ছড়িয়ে সমুদ্রের গ্রাস নাচুনি জলের ঘূর্ণি,

আকাশ আগুনের নির্মোহ ব্রহ্মাণ্ড গ্রাস জানে শাশ্বত কাল

তবুও উঠোনে জল জননী রোজ থাকে সান্ধ্য অনুরাগে,

কতদূরে ভেসে আসে বাউল জারি সারি গান বদর বদর

উদার গর্ভগৃহ ভাঙচুর প্রতিদিন জানে না প্রত্ন স্থপতি

 

নষ্ট অনুরাগে

ভর সন্ধ্যার রঙ মেখেছে কৃষ্ণচূড়া

দিনান্তে তখন পরাগ রঙের জ্যোতি

এখনো মাটির গন্ধে মারি মড়কের গন্ধ

দ্বিধায় থাকে স্বচ্ছ কথার সকল ভূমিকা

কোঁচড়ে সোহাগ শিউলি চোখের আদর

কুয়াশা কুচির সকাল ডাকে নেপথ্যে আবার

ত্রিভুবন জানে আগমনী কাশের ঝালর

কেটে যাবে নরক অতীত অপার করুণায়

যাপন অনুভবে ছিন্নবাস করুণ জাগরণী

#

শোকশীর্ণ মুখ জানে কুবেরের গোপন কুঠুরি

কত অশ্রু গঙ্গা ইছামতী ভাগীরথী যমুনার বুক

তবুও কেঁপেছে ত্রিভুবন খেলা যত নেপথ্যে আবার

সুখ শোক আমার নয় কেবল অস্বীকার

চেনা শরীরে যারা চলে যায় তারাও মানুষ

নষ্ট কালের কথায় আবারও ট্রিলজি স্বরলিপি

প্রতিশ্রুতি রাখো না রাখো অস্তাচল জাগে

শরীরী অন্ধকারে ঝরা রক্তের রঙে বদল নেই

অনবরত লজ্জায় কাঁপে তীব্র যন্ত্রণা নষ্ট অনুরাগে


সাবস্ক্রাইব করুন! মেইল দ্বারা নিউজ আপডেট পান